সোমবার   ১০ নভেম্বর ২০২৫   কার্তিক ২৬ ১৪৩২   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

তরুণ কণ্ঠ|Torunkantho
১৭

আমন ধানের ভালো ফলনে কৃষকের মুখে হাঁসি 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৫  

মৌলভীবাজারের শষ্য ভান্ডার খ্যাত হাওর কাউয়াদীঘি অধ্যুষিত রাজনগরে আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে এবার আনন্দের হাঁসি ফুটে উঠেছে। বিগত ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত রাজনগরের কৃষকদের এবার এক বুক আশা নিয়ে নতুন ধান ঘরে তুলতে মাঠে নেমেছে। এবছর রাজনগরে মোট ১১হাজার ৬শ ৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮৮ হেক্টর বেশী এবং আবাদকৃত আমন ফসলের বাজার মূল্য ১৩৯শ কোটি ৯২লাখ ৮০ হাজার টাকা বলে জানায় রাজনগর কৃষি বিভাগ।

 

রাজনগর কৃষি বিভাগ সূত্রের বরাতে জানাযায়, চলতি বছরে উপজেলায় সরকারি ভাবে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় মোট ১১হাজার ৬৭ হেক্টর। কিন্তু বাস্তবে ১১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৮৮ হেক্টর বেশী। এর মধ্যে কাউয়াদীঘি হাওরে ৫হাজার হেক্টর এবং উজানে ৬হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে কৃষকের স্বপ্নের আমন আবাদ করা হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৪ হাজার ৯৮২ মেঃ টন (চাউল)। যার বাজার মূল্য ১৩৯শ কোটি ৯২লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিগত ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায়, পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে রাজনগরের উজান ও কাউয়াদীঘি হাওরের আমন ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হলে দরিদ্র কৃষককুল নিঃস্ব হয়ে পড়ে। এসময় উপজেলার প্রায় ১১হাজার হেক্টর জমিতে আমন ফসল আবাদ করা সম্ভব হয়নি। যাতে বছর প্রতি ৩২হাজার ৯৮২ মেঃ টন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হয়। দুর্যোগ প্রবণ দুবছরে রাজনগরের কৃষি ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতি হয় প্রায় ২৬৩ কোটি ৮৫লাখ ৬৬হাজার ৮৯৮টাকা। এবার সঠিক সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় এবং অনুকুল প্রাকৃতিক পরিবেশ বিরাজ করায় আমন আবাদ প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত রাজনগরের ২৯হাজার কৃষক/কৃষানী একবুক আশা নিয়ে স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলতে মাঠে নামছে।

 

এদিকে পাউবো সূত্রের বরাতে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে সরকার জেলার বৃহত্তম হাওর কাউয়াদীঘি হাওরে নিরাপদে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাউয়াদীঘি ধান উৎপাদন ক্যাচম্যান্ট এরিয়ার অতিরিক্ত পানি নিস্কাশনের জন্য ১২শ কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি পাম্প বিশিষ্ট কাশিমপুর পাম্প হাউজ নির্মাণ করে। বন্যা, অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে হাওরের পানি বৃদ্ধি পায়। অনেক সময় পাউবো’র নিয়ন্ত্রনাধীন পাম্প হাউজের ৮টি পাম্প বিদ্যুতের লো’ভোল্টেজ ও পাম্প গুলোর নিস্কাশন ক্ষমতা হ্রাস পেলে সময় মতো পানি নিষ্কাশন করতে পারে না। ফলে আবাদি জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। কিন্তু এবার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগ সময় মতো যথাযত ব্যবস্থা গ্রহন করায় রাজনগরে কৃষকের মুখে হাঁসি ফুটেছে।

 

কেওলা গ্রামের আমন চাষি লনি মিয়া জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবার তীব্র আশংকা নিয়ে আমন চাষ করি। কারণ প্রতি বছরই ফসল ঘরে তোলার মূহুর্তে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্নের ফসল নষ্ট হয়েে যায়। এবারও এ আশংকার উর্ধ্বে ছিলাম না। কিন্তু সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ উদ্যোগের কারণে কৃষককুলের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। প্রায় একই কথা বলেছেন কাশিমপুর গ্রামের মোশাহিদ মিয়া, আব্দুল্লাহপুর গ্রামের গনি মিয়া, ভানুর মহলের সুজন মিয়া প্রমুখ আমন চাষি।

 

এ ব্যাপারে রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: আব্দুল্লাহ আল আমীন জানান, অনুকুল আবহাওয়া ও হাওরে কুশিয়ারা নদীর পানি প্রবেশরোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাসময়ে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এবার আমন ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক হয়েছে। তিনি আরো জানান, জেলার বৃহত্তম হাওর কাওয়াদীঘি সহ উজানের প্রায় শতভাগ জমিতে চাষকৃত আমন ফসলের বাম্পার ফলন হওয়ায় রাজনগরের কৃষকদের চোঁখে মুখে ভীষন আনন্দের ছায়া ভেসে উঠেছে।

এই বিভাগের আরো খবর